অর্থায়ন কি ?
অর্থায়ন হলো ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেমন কোম্পানি, ফার্ম,ব্যক্তি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল (অর্থ) সরবরাহ করার সহজ বিষয় যা সংস্থার অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের সবচেয়ে অনুকূল অবস্থা ।
সুপ্রিয় পাঠক, RANDOM SPEECH এর এই আর্টিকেলে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন এবং মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন কাকে বলে, অর্থায়নের বৈশিষ্ট্যসমূহ, সুবিধাসমূহ, অসুবিধাসমূহ, অর্থসংস্থানের উৎসসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে......
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন কাকে বলে?
প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যাবলী যথা: কাঁচামাল ক্রয়,মজুরি প্রদান অন্যান্য প্রশাসনিক ও বাজারজাতকরণ খরচ মেটানোর জন্য চলতি মূলধন এর প্রয়োজন হয়। সাধারণত এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য যে তহবিল সংগ্রহ করা হয় তাকে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন বলে। নিম্নে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:
I.M. Pandey এর মতে “এক বছর বা তার চেয়ে কম সময়ের জন্য প্রাপ্য হয় তাকে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন বলে।”
Howard and Upton এর মতে “এক বছর বা তার চেয়ে কম সময়ের জন্য তহবিল ধার করা বাধা দেয়াকে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন বলে।”
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের বৈশিষ্ট্য
যে অর্থ এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য পাওয়া যায় তাকে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন বলে। স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান নিম্নে তা আলোচনা করা হল:
- মেয়াদ (Maturity) : স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের মেয়াদকাল এক বছর বা তার চেয়ে কম হয়ে থাকে।
- স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎস (Sources of Short Term Financing) : ব্যবসা, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাণিজ্যিক পত্র ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎস।
- স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের ব্যবহার (Uses of Short Term Financing) : সাধারণত একটা ফার্মের দৈনন্দিন কার্যপরিচালনা করতে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, ব্যবসায় চলতি মূলধনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন করা হয়। যেমন: কাঁচামাল ক্রয়।
- আনুষ্ঠানিকতা (Formalities) : স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন দ্রুত সংগ্রহ করা যায়। এই অর্থায়ন সংগ্রহ করার জন্য তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই।
- তহবিলের ব্যয় (Cost of Fund) : স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের ব্যয় ফার্মের মূলধন কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুটোই হতে পারে। আবার অনেক স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের কোন খরচ নেই যেমন: বকেয়া খরচসমূহ।
- পরিশোধ পদ্ধতি (Repayment Method) : স্বল্পমেয়াদি ঋণ সংগ্রহ করা যেমন সহজ তেমনি পরিশোধ করাও সহজ। প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এই ঋণের উপর থাকে।
- জামানত (Security) : অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের জামানতের প্রয়োজন হয় না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে জামানতের প্রয়োজন পরে। যেমন: মজুদপণ্য বন্ধকী ঋণ।
- ঋণের পরিমাণ (Loan Amount) : স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী থেকে কম হয়ে থাকে।
- নিয়ন্ত্রণ (Control) : স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে মালিকদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় থাকে। ঋণ তহবিল সরবরাহকারী তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের সুবিধাসমূহ:
- সহজ সংগ্রহ
- কম খরচ
- নমনীয়তা
- নিয়ন্ত্রণ সুবিধা
- সহজ শর্ত আরোপ
- নবায়ন সুবিধা
- কম ঝুঁকি
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের অসুবিধাসমূহ:
- স্বল্প পরিমাণ ঋণ
- স্বল্পমেয়াদ
- পরিশোধ ঝুঁকি
- বেশি সুদ
- নগদ বাট্টা হারানো
- পণ্যের ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি
- ঋণের শর্ত
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎসসমূহ কি কি?
স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎস সমূহ এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য যে অর্থায়ন করা হয় তাকে স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন বলে। স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের উৎস সমূহ চিত্রসহ আলোচনা করা হলো:
বাণিজ্যিক কাগজ (Commercial paper) কি?
বাণিজ্যিক কাগজ একটি স্বল্পমেয়াদী হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল যা ইস্যু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ সংগ্রহ করে থাকে। এর বিপরীতে ঋণগ্রহণ কালে কোন জামানত দিতে হয় না। বাণিজ্যিক পত্রের মেয়াদ কাল নবায়নযোগ্য নয়। বাণিজ্যিক পত্র দুইভাবে বিক্রয় করা যায় যথা: সরাসরি সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিক্রয় এবং ডিলারের মাধ্যমে বিক্রয়।
সাধারণত বাণিজ্যিক পত্র ইস্যুর ব্যয় ব্যাংক ঋণের চাইতে কম। বাণিজ্যিক পত্রের মেয়াদ সাধারণত ৩ দিন থেকে ৯ মাস বা 270 দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক পত্র ক্রয় করে থাকে যেমন: ব্যাংক, বীমা-কোম্পানী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
বাণিজ্যিক পত্রের বৈশিষ্ট্য (Features of Commercial Paper)
- বিক্রয়ের পদ্ধতি (Methods of Selling) : বাণিজ্যিক পত্র দুই ভাবে বিক্রয় করা যায় ১. সরাসরি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিক্রয় ২. ডিলারের মাধ্যমে বিক্রয়
- ইস্যুকারী কোম্পানির ধরন (Nature of Issuing Company) : সাধারণত Blue Chip কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক পত্র ইস্যু করার ক্ষমতা রাখে।
- হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল (Negotiable Debt Instrument) : বাণিজ্যিক পত্র স্বল্পমেয়াদী হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল।
- জামানত (Security) : এর বিপরীতে ঋণগ্রহণ কালে কোন জামানত দিতে হয় না।
- ব্যয় (Cost) : বাণিজ্যিক পত্র ইস্যু ব্যয় ব্যাংক ঋণের চাইতে কম।
- মেয়াদ (Maturity) : বাণিজ্যিক কাগজের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ 270 দিন বা ৯ মাস।
মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন কাকে বলে?
মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মাঝামাঝি একটি অবস্থা। ১ বছরের উপরে এবং সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৭ বছর বা ১০ বছরের জন্য যে অর্থায়ন করা হয় তাকে মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন বলে।
J.C. Van Horne এর মতে, “সাধারণত ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদী অর্থায়নকে মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়
মধ্যমেয়াদি অর্থায়নের বৈশিষ্ট্যঃ
- মেয়াদকালঃ মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন এর মেয়াদ কাল সাধারণত ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে তবে কোনো ক্ষেত্রে ৭ বছর বা ১০ বছর হয়ে থাকে।
- ঋণের আকারঃ ঋণের পরিমাণ সাধারণত স্বল্পমেয়াদী অপেক্ষা বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী অপেক্ষা কম হয়ে থাকে। তবে ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে ঋণের উদ্দেশ্য ও মেয়াদের উপর।
- মধ্যমেয়াদি ঋণের ব্যবহারকারীঃ সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (ছোট,মাঝারি,বড়) মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন করতে পারে।
- উৎসঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, ইজারা কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন এর প্রধান উৎস।
- ঋণের উদ্দেশ্যঃ যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রতিস্থাপন, দালানকোঠার উন্নয়ন ও চলতি মূলধনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন করা হয়।
- পরিশোধ পদ্ধতিঃ সাধারণত কিস্তিতে মধ্যমেয়াদি ঋণের পরিশোধ করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এক সাথেই ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ ঋণদাতা ও গ্রহীতার সাথে ঋণ গ্রহণের সময় পরিশোধ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
- জামানত ব্যবস্থাঃ মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন সাধারণত স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন এর সুবিধা সমূহ
- নমনীয়তা: মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন অনেক বেশি নমনীয়। ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার দেয়ার অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োজনমতো ঋণের মেয়াদ ও ঋণের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারে।
- কম খরচঃ মধ্যমেয়াদি ঋণের খরচ দীর্ঘমেয়াদী ঋণের খরচের চেয়ে কম হয়ে থাকে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদের পরিমাণ ও সংগ্রহ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
- দ্রুত অর্থায়নঃ মধ্যমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত অর্থায়ন করা যায় কারণ মধ্যমেয়াদি অর্থায়নে আনুষ্ঠানিকতা তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে।
- নবায়নযোগ্যঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদি ঋণ নবায়নযোগ্য। ঋণগ্রহীতা মেয়াদ শেষে আবার ঋণ গ্রহণ করতে পারে। আবার ঋণ পরিশোধে অসুবিধা তৈরি হলে ঋণ পরিশোধ মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় যদি ঋণচুক্তিতে উল্লেখ থাকে।
- গোপনীয়তা রক্ষাঃ মূলধন বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে অনেক গোপনীয় তথ্য জনগনের নিকট প্রকাশ করতে হয়। অন্যদিকে ব্যাংক,বিমা বা অন্যকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন করলে গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব।
- নিয়ন্ত্রণঃ মধ্যমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের উপর ঋণদাতাদের কোন প্রভাব থাকে না। ফলে প্রতিষ্ঠান সকল কাজ সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয়।
- কর সুবিধাঃ মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন এর ক্ষেত্রে কোন সুবিধা পাওয়া যায় ঋণের কিস্তির উপর প্রতিষ্ঠানে এই সুবিধা পেয়ে থাকে।
- ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান উৎসঃ যে সকল প্রতিষ্ঠান শেয়ার বা বন্ড বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না তাদের মূলধনের একটা অন্যতম উৎস হিসেবে মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
মধ্যমেয়াদি অর্থসংস্থানের উৎসসমূহ
- বাণিজ্যিক ব্যাংক
- বীমা কোম্পানি
- ফাইন্যান্স কোম্পানি
- উন্নয়ন ব্যাংক ইজারা কোম্পানি