সময়ের সাথে সাথে অর্থের মূল্যের পরিবর্তন ঘটে। আজকের 1000 টাকা এবং 1 বছর পরের 1000 টাকা সমান নয়। এর কারণ হলো সময় ও সুদের হার। তাই দৈনন্দিন আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থের সময় মূল্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
একাধিক বিনিয়োগের মধ্যে কোন সুযোগটি ভালো কোন বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতে কত পাওয়া যাবে ঋণ গ্রহণ করলে তার কিস্তির পরিমাণ কত হওয়া উচিত বা বিনিয়োগ হতে প্রাপ্তির হার কত এই বিষয়গুলো জানার জন্য অর্থের সময় মূল্য গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থের সময় মূল্য কি?
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থের মূল্যের যে তারতম্য ঘটে তাকে অর্থের সময় মূল্য বলে। যেমন আজকের 1000 টাকা এবং আজ থেকে এক বছর পর 1000 টাকার মূল্যের সমান নয়। অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ভবিষ্যতে প্রাপ্ত অর্থের মূল্য মূল্যের পরিবর্তনের ধারণাকেই অর্থের সময় মূল্য বলে।
অর্থের সময় মূল্য এর মূল কারণ সময় ও সুদের হার।
ধরি,
- ১- তোমার বন্ধু তোমার কাছে 1000 টাকা চাইল এবং বলল এক বছর পর পরিশোধ করবে।
- ২- ঢাকা ব্যাংক বলছে তাদের ব্যাংকে 1000 টাকা জমা রাখলে 10% সুদের হারে এক বছর পরে 1100 টাকা প্রদান করবে।
অর্থাৎ, আজকের 1000 টাকা আগামী বছরের 1100 টাকা অর্থের সময় মূল্য অনুসারে সমান মূল্য বহন করে। এখানে 1000 টাকা হল বর্তমান মূল্য এবং 1100 টাকা হল ভবিষ্যৎ মূল্য।
ভবিষ্যৎ মূল্য কি?
ভবিষ্যৎ মূল্য বলতে ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে কি পরিমাণ নগদ প্রবাহ বা অর্থ পাওয়া যাবে তা বুঝায়। যেমন: আজকে 10% সুদে ঢাকা ব্যাংকে 1000 টাকা রাখলে এক বছর পর 1100 টাকা পাওয়া যাবে। এখানে 1100 টাকা ভবিষ্যৎ মূল্য।
বর্তমান মূল্য কি?
ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাওয়ার জন্য বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, তাকে বর্তমান মূল্য বলে। যেমন: আজকে 10% সুদে ঢাকা ব্যাংকে 1000 টাকা রাখলে এক বছর পর 1100 টাকা পাওয়া যাবে। এখানে 1000 টাকা বর্তমান মূল্য।
বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ মূল্যের পার্থক্য (Difference Between Present value and Future Value)
অর্থের বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যৎ মূল্য একে অপরের বিপরীত। তবে একটি ছাড়া অপরটি অসম্ভব। এদের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে বর্তমান মূল্য ভবিষ্যৎ মূল্যের পার্থক্য দেয়া হল:
| পার্থক্যের বিষয় | বর্তমান মূল্য | ভবিষ্যৎ মূল্য |
সংজ্ঞা |
ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাওয়ার জন্য বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, তাকে বর্তমান মূল্য বলে। | নির্দিষ্ট মেয়াদ ও সুদের হারে বর্তমানের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থে মেয়াদপূর্তিতে মূল্য পাওয়া যাবে তাকে ভবিষ্যৎ মূল্য বলে। |
| পদ্ধতি | বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করার কৌশল কে বাট্টাকরণ বলে। | ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করার কৌশল কে চক্রবৃদ্ধিকরণ বলে। |
| সূত্র | (PV) = FV/(1+k)n | (FV) = PV(1+i)n |
| সময় | সময় বেশি হলে বর্তমান মূল্য কমে। | সময় বেশি হলে ভবিষ্যৎ মূল্য বাড়ে। |
| পরিমাণ | বর্তমান মূল্য ভবিষ্যৎ মূল্য অপেক্ষা কম হয়। | ভবিষ্যৎ মূল্য বর্তমান মূল্য অপেক্ষা বেশি হয়। |
| সুদের হার | সুদের হার যত বড় হবে, বর্তমান মূল্য তত ছোট হবে। | সুদের হার যত বড় হবে, ভবিষ্যৎ মূল্য তত বেশি হবে। |
| ব্যবহার | আর্থিক সম্পদ মূল্যায়নে ব্যবহার করা হয়। | বিনিয়োগ হতে কত প্রাপ্তি হবে তা জানার জন্য ব্যবহার করা হয়। |
| নির্ণয় পদ্ধতি | বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করার কৌশল কে বাট্টাকরণ বলে। | ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণ করার কৌশল কে চক্রবৃদ্ধিকরণ বলে। |
নির্ভরশীলতা |
বর্তমান মূল্য ভবিষ্যৎ মূল্যের উপর নির্ভর করে। ভবিষ্যৎ নগদ প্রভাব জানা না থাকলে বর্তমান মূল্য বের করা যায় না। | ভবিষ্যৎ মূল্য বর্তমান মূল্যের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান মূল্য জানা না থাকলে ভবিষ্যৎ মূল্য বের করা যায় না। |
অ্যানুইটি বা বার্ষিক বৃত্তি কি?
বার্ষিক বৃত্তি বলতে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পাওয়া গেলে বা প্রদান করা হলে তাকে বার্ষিক বৃত্তি বলে।
যেমন: লিংকন 4 বছর যাবৎ প্রত্যেক বছর শেষে জনতা ব্যাংকে 10000 হাজার টাকা জমা রাখেন। বার্ষিক বৃত্তি কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। ১. সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি (Ordinary Annuity) ২. অগ্রিম বার্ষিক বৃত্তি (Annuity Due)
সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি (Ordinary Annuity) বলতে কি বুঝায় ?
চুক্তি প্রদানের পরে নির্দিষ্ট সময় পর থেকে যে বার্ষিক বৃত্তি প্রদান বা প্রাপ্তি শুরু হয় তাকে সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি বলে।
L.J. Gitman এর মতে “যে বার্ষিক বৃত্তি নগদ প্রবাহ প্রতিটি মেয়েদের শেষে ঘটে থাকে সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি (Ordinary Annuity) বলে।”
সাধারণ বার্ষিক বৃত্তির বৈশিষ্ট্য:
- একটি নির্দিষ্ট পরিমান প্রাপ্তি-প্রদান থাকবে।
- নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রাপ্তি-প্রদান ঘটবে।
- একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে।
- প্রাপ্তি-প্রদান নির্দিষ্ট সময়ের শেষে (সাধারণত বছরের শেষে) শুরু হবে।
দেয় বা অগ্রিম বার্ষিক (Annuity Due) বৃত্তি কাকে বলে?
যদি বার্ষিক বৃত্তির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের শুরুতে সাধারণত বছরের শুরুতে প্রদান বা গ্রহণ শুরু হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রহণ বা প্রদান চলে তবে তাকে অগ্রিম বার্ষিক বৃত্তি বলে।
L.J. Gitman এর মতে “যে বার্ষিক নগদ প্রবাহ প্রতিটি মেয়াদের শুরুতে ঘটে তাকে অগ্রিম বার্ষিক বৃত্তি (Annuity Due) বলে।”
অগ্রিম বার্ষিক বৃত্তির বৈশিষ্ট্য:
- একটি নির্দিষ্ট পরিমান প্রাপ্তি-প্রদান থাকবে।
- নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রাপ্তি-প্রদান ঘটবে।
- একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে।
- প্রাপ্তি-প্রদান নির্দিষ্ট সময়ের শেষে (সাধারণত বছরের শুরুতে) শুরু হবে।
নামিক সুদের হার ও কার্যকরী সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য (Nominal Vs Effective Annual Rate of Interest)
| পার্থক্যের বিষয় | নামিক সুদের হার | কার্যকরী সুদের হার |
সংজ্ঞা |
যদি নির্দিষ্ট হারে আসল টাকার উপরে সুদ গণনা করা হয় তবে তাকে নামিক সুদের হার বলে। | প্রকৃতপক্ষে যে হারে সুদ অর্জিত হয় তাকে সুদের কার্যকারী সুদের হার বলে। |
| নির্ভরশীলতা | সুদের নামিক হার কার্যকারী হার এর উপর নির্ভর করে না। | ক্রবৃদ্ধি সময়ের (বছরে যতবার সুদ প্রদত্ত হচ্ছে) উপর নির্ভর করে। |
| তুলনা | সুদের নামিক হার কার্যকারী হারের তুলনায় কখনো বেশি হতে পারে না। | সুদের কার্যকারী হার নামিক হারের সমান বা বেশি হতে পারে। |
ভিত্তি |
সুদের নামিক হার বাৎসরিক হিসেবে গণনা করা হয়। | বছরে কতবার সুদ প্রদত্ত হচ্ছে তার উপর কার্যকরী সুদের হার গণনা করা হয়। |
উদাহরণ |
চক্রবৃদ্ধি সুদ সাত 7% পার্সেন্ট হারে 1000 টাকা দশ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা হলে সুদের নামিক হার হবে 7%। | যদি ত্রৈমাসিক 7% হারে চক্রবৃদ্ধি সুদে একই পরিমাণ অর্থ একই সময়ের জন্য বিনিয়োগ করা হয় তবে কার্যকরী সুদের হার হবে 7.2% । |
স্থির ব্যয় কী?
উৎপাদন হ্রাস বৃদ্ধির ফলেও যে ব্যয়ের পরিবর্তন হয় না তাকে স্থির ব্যয় (Fixed Cost) বলে ।
পরিবর্তনশীল ব্যয় কি?
উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে যে ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি পায় তাকে পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable Cost) বলে।
স্থির ব্যয় পরিবর্তনশীল ব্যয় এর মধ্যে পার্থক্য (The Difference Between Fixed Cost and Variable Cost)
একটি প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের ব্যয় হয়ে থাকনা কেন তাদেরকে প্রধানত 2 ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ স্থির ব্যয় এবং পরিবর্তনশীল ব্যয় । উৎপাদন ও বিক্রয়ের পরিমাণ পরিবর্তন হলেও যে ব্যয়ের কোন পরিবর্তন হয়না তাকে স্থির ব্যয় বা স্থায়ী ব্যয় বলে। আবার প্রতি একক উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে যে ব্যয় বৃদ্ধি পায় অথবা প্রতি একক উৎপাদনের সাথে সাথে হ্রাস পায় তাকে পরিবর্তনশীল ব্যয় বলে।
নিম্নের স্থির ব্যয় এবং পরিবর্তনশীল ব্যয়ের পার্থক্য দেয়া হলোঃ
| পার্থক্যের বিষয় | স্থির ব্যয় | পরিবর্তনশীল ব্যয় |
|---|---|---|
সংজ্ঞা |
উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে যে ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি পায় তাকে পরিবর্তনশীল ব্যয় বলে। | উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে যে ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি পায় তাকে পরিবর্তনশীল ব্যয় বলে। |
| মোট ব্যয়ে অবস্থান | মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্থির ব্যয় স্থির থাকে। | মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল ব্যয় পরিবর্তিত হয়। |
| প্রতি একক ব্যয়ের ক্ষেত্রে | প্রতি একক ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্থির ব্যয় পরিবর্তনশীল। | প্রতি একক ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল ব্যয় স্থির। |
সময়ের পরিবর্তন |
অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে স্থির ব্যয় পরিবর্তন হতে পারে। | অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল ব্যয় প্রভাবিত হয় না। |
ব্রেক ইভেন পয়েন্ট বা সমচ্ছেদ বিন্দু (Break Even Point) কাকে বলে ?
ব্রেক ইভেন পয়েন্ট বা সমচ্ছেদ বিন্দু হচ্ছে বিক্রয়ের এমন একটি পরিমাণ যেখানে কোম্পানির লাভও হবে না আবার ক্ষতিও হবে না। অর্থাৎ সুদ ও করপূর্ব আয় শূন্য হবে।
L.J. Gitman এর মতে, “প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমচ্ছেদ বিন্দু বলতে ওই বিন্দুকে বুঝায় যেখানে মোট পরিচালন ব্যয় বিক্রয়ের সমান হয়।”